বৈজ্ঞানিক ভাষায় হলুদের নাম হলো(Curcuma longa) হলো হলুদ গাছের
হলুদ মাটির গভীরে শিকড় থেকে উৎপত্তি হয়।
আবার এটি একটি জনপ্রিয় মশলা হিসেবে অধিক পরিচিত। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে প্রয়োজনীয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশ যেমন- ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো রন্ধনকাজে ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও এটি আদার ন্যায় ও (zingiberaceae) এর অন্তর্ভুক্ত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
এ হলুদ গাছের মূল উৎস ও উৎপত্তি ঘটে দক্ষিণ এশিয়াতে। এ গাছ মূলত ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে। এজন্য এ হলুদ গাছের টিকে থাকার জন্য ও প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টির প্রয়োজন। সাধারণত বছরে শুধুমাত্র একবারই হলুদের শিকর তোলা হয়। ঠিক তেমনিই পরবর্তী বছরে পুনরায় ঐ শিকড় থেকেই হলুদ জন্মায়।
হলুদকে অধিকাংশ অঞ্চলভেদে ‘হলদি’ নামে ও ব্যাপক পরিচিত। তবে এ গাছের শিকড় প্রায় ৪-৫ ঘন্টার মতো সিদ্ধ করা হয়, তারপর তা রোদে শুকানো হয়। অতঃপর তা থেকে গাঢ় রং এর হলুদ গুঁড়ো পাওয়া যায়। সেই আদিকাল থেকে এ হলুদকপ আয়ুর্বেদিক ভাবেও ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া ট্রেডিশনালভাবে হলুদ ভালেভাবে ধোঁয়ার পর শিল- নোঁড়ায় পানি দিয়ে বেএে হলুদ পেস্ট করেও রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়।আবার রূপচর্চার কাজেও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এ হলুদের রয়েছে বিশেষ
হলুদ ভেষজ উদ্ভিদের ন্যায় ও অনেক উপকারী। , যার উচ্চতা ৬০ -৯০ সেমি উঁচু এবং এটার পাতা দেখতে বড় আয়তাকার হয়ে থাকে এবং উদ্ভিদটি প্রায় এক মিটার লম্বা হয়। এ গাছ বেড়ে উঠার জন্য অন্তত ২০-৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা, তাছাড়া প্রচুর পরিমানেও বৃষ্টির প্রয়োজন হয়।নাহয় হলুদ আাবাদ করা যায় না।
এছাড়া এ গাছের ফুলের রং হলুদ ও সাদা হয়,দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। হলুদ গাছের ফুল দিয়ে আবার ভর্তা বানিয়ে ও গরম ভাতের সাথে আয়েশ করে খাওয়া যায়।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-
হলুদের ফুল তুলে এনে ফুলের পাতা গুলো ছাড়িয়ে ভালো করে ধুঁয়ে কুচিকুচি করে কেটে নিন। তাতে কয়েকটি শুকনো মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে মথে নিন সাথে স্বাদমত লবণ দিয়ে আর সাথে সরিষা তেল , খুব সহজেই তৈরি হয়ে গেলো হলুদ ফুলের ভর্তা।ঘ্রাণটাও সেরা।
জ্বর, ঠান্ডা বা গলা ব্যথা করলে এটি খুবই উপকারী। গোল্ডেন মিল্ক তৈরির নিয়ম-
গরুর দুধ ১ গ্লাস এটাকে জ্বাল করে এতে হলুদ গুড়ো হাফ চা চামচ দিতে হবে, ১ টুকরো আদা, ১ টুকরা দারচিনি,এলাচ ২টি, ভালো করে ফুটিয়ে তা নামিয়ে, গ্লাসে পরিবেশন করার জন্য গোল্ডেন মিল্কের ওপরে কিছু বাদাম আর এক চিমটি জাফরান সাথে স্বাদমত মধু দিয়ে দিলেই হয়ে যাবে অনেক সুন্দর হলুদ দুধ বা হলদে দুধ। এটি সকালে বা রাতে খেতে হবে, রুপচর্চার কাজেও এর অনেক কার্যকারীতা বিদ্যমান। সৌন্দর্য বর্ধনে এমনকি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও এটি অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে এর ফলাফল দেখে নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।রোগ -প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সাহায্য করে থাকে।
১.প্রাকৃতিকভাবে কাঁচা হলুদ একটি এন্টিসেপটিক। যেকোন ক্ষত বা পোড়া জায়গাতে হলুদ লাগালে অনেক উপকার রয়েছে। দ্রুত ব্যথা ও দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
২. ফুলকপি সবজির সাথে হলুদ ব্যবহার করলেও এতে ক্যান্সার নামক জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে যা প্রস্টেট ক্যানসারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।
৩.জ্বর, ঠান্ডা, গলা ব্যথা হলে ও দুধের সাথে হলুদ দিয়ে গোল্ডেন মিল্ক তৈরি করে খেলেও এ থেকে উপশম ঘটে।
৪.প্রতিবছর কোরবানি ঈদে ও এ হলুদ যেমন মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেমনি মাংস কাটার সময় ও এ হলুদের ব্যবহার করে যাতে কাটতে সুবিধা হয় আর হাত পিছলে না কাটে।
৫. হলুদের পেস্ট করে মুখে দিলেও ত্বকের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
৬. আবার হলুদ রক্ত পরিষ্কার করতে ও সাহায্য করে থাকে।
৭.মেসতা বা মুখের বলিরেখা ও চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে ও সাহায্য করে থাকে।
৮.বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের কারণে টিনেজার বয়সে প্রচুর পরিমাণে ব্রণ হয়, হলুদ ব্যবহারে ব্রণের সমস্যাও দূর হয়।
৯. শরীরের কোন স্থানে আঘাত পেয়ে ক্ষত হয়ে গেলে সেখানে হলুদ লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
১০. মানসিক অবসাদ দূরীকরণে ও হলুদ বেশ উপকারী।
১১. পেটের মেদ বা অতিরিক্ত চর্বি বিপাকে ও সাহায্য করে থাকে।
হলুদের উপাকারিতা বা গুণাবলী বলে কখনোই শেষ করা যাবে না। হলুদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল ক্ষেতেই অনেক কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করতে সক্ষম।